প্যাটেন্ট-এর ধারণা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

আজকের শিল্পজগত যার আবিষ্কারের কাছে ঋণী তিনি হলেন শিল্প বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃত স্কটিশ ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জেমস ওয়াট (James Watt) (১৭৩৬-১৮১৯)। তিনি প্রখ্যাত Glasgow বিশ্ববিদ্যালয়ে যন্ত্রপাতি উৎপাদক হিসেবে কাজ করার সময় দেখতে পান যে, যে সকল ইঞ্জিন ডিজাইন ব্যবহার হচ্ছে তাতে ইনার্জির যথেষ্ট অপচয় ঘটছে এবং সিলিন্ডারকে বারে বারে ঠাণ্ডা করতে যেয়ে সময়েরও অপচয় হচ্ছে। তিনি | এমন একটা নতুন ডিজাইন উপস্থাপন করেন যেখানে আলাদা কনডেন্সার (Condenser) ব্যবহারের নির্দেশ করা হয় এবং ঘূর্ণায়মান যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। এতে সময় ও শক্তির অপচয় ব্যাপক হ্রাস পায়। এতে নতুন ইঞ্জিন আবিষ্কারের ধারণা তার মধ্যে শক্তিশালী হয় । অতঃপর তিনি তার আবিষ্কারকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করার জন্য বিত্তবান ব্যক্তি মি. ম্যাথিউ বোল্টনকে পার্টনার করে সোহো ফাউথ্রি নামে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন । এখানেই গবেষণার মধ্য দিয়ে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কৃত হয়। এরপর এটি পেটেন্টের রাজকীয় সনদ লাভ করে । এরপর অনেকেই এই আবিষ্কারকে নকল করে এগুতে চেয়েছে কিন্তু প্রতিটা মামলায় রায় এসেছে জেমস্ ওয়াটসের পক্ষে। প্যাটেন্ট নামক এই আইনগত সুরক্ষা পরবর্তীতে হাজারো আবিষ্কারে মানুষকে উৎসাহ জুগিয়েছে। আর এভাবেই ঘটেছে শিল্প বিপ্লব ।

চিত্র : জেমস ওয়াট কর্তৃক নির্মিত বাষ্পীয় ইঞ্জিনের মডেল

প্যাটেন্ট হলো নতুন আবিষ্কৃত ও নিবন্ধিত পণ্য বা বস্তুর ওপর আবিষ্কারকের এমন একচ্ছত্র অধিকার যার বলে তিনি এটি তৈরি, উন্নয়ন, ব্যবহার ও বিক্রয়ের একক অধিকার ভোগ করেন । এর বলে আবিষ্কারক অন্যকে লাইসেন্সও প্রদান করতে পারেন । কোনো আবিষ্কারকে প্যাটেন্ট সনদ পাওয়ার উপযোগী হতে হলে তাতে নিম্নের চারটি উপাদান থাকা আবশ্যক :

  • আবিষ্কারটি অবশ্যই নতুন হতে হবে অর্থাৎ এটি পূর্বে আবিষ্কৃত বা পূর্বে আবিষ্কৃত কোনো বিষয়ের অংশ হতে পারবে না;
  • এরূপ নতুন উদ্ভাবিত বিষয়টি অবশ্যই আবিষ্কারযোগ্য (Inventive) ও অকল্পনীয় সৃজনশীল ধারণার ফল হতে হবে এবং ধারণাগতভাবে তা একক ও অনন্য হবে;
  • আবিষ্কারের অবশ্যই শিল্প উপযোগিতা থাকতে হবে অর্থাৎ একে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানো যাবে এবং 
  • এটা দেশের প্রচলিত কোনো আইন দ্বারা নিষিদ্ধ বা এর ব্যবহার আইন দ্বারা নিষিদ্ধ এমন কোনো ধরনের আবিষ্কারের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারবে না ।

প্যাটেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রযুক্তি ও শিল্পের উন্নয়নে আবিষ্কারককে উৎসাহ প্রদান করা । এর ফলে আবিষ্কারক তার আবিষ্কারের সুফল ভোগের বিষয়ে যেমনি নিরাপত্তা বোধ করে তেমনি এটা দেখে অন্যরাও নতুন আবিষ্কারে মনোনিবেশ করতে উৎসাহিত হয়। আইনানুযায়ী প্যাটেন্ট নবায়নযোগ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিধান অনুযায়ী প্যান্টেন্ট সনদ ১৭ বছর পর্যন্ত বহাল থাকে। বাংলাদেশে ১৯১১ সালের প্যাটেন্ট ও ডিজাইন আইন প্রচলিত রয়েছে । এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্যাটেন্ট সনদের সময়কাল ১৬ বৎসর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ । উল্লেখ্য, ২০০১ সালে সরকার নতুন একটা প্যাটেন্ট ও ডিজাইন আইনের খসড়া প্রস্তুত করলেও অদ্যাবধি পার্লামেন্টে তা পাস হয়নি ।

Content added By
Promotion